ঢাকা ০১:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত মদনে প্রাণিসম্পদের উদ্যোগে মোরগ ও ছাগলের খাদ্য বিতরণ ইটনায় সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত মদনে সংবাদ প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন শিক্ষক রাজধানীতে পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন করেন: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে মদন উপজেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সায়েম সাধারণ সম্পাদক আরিফ মদনে ফের বয়রাহালা ব্রীজের এপ্রোচ দখল করে ঘর নির্মাণ মদনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষককে হত্যার চেষ্টা

সবার ওপরে শিক্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭
  • ৩২৭ বার

হাওর বার্তা

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সঙ্কট। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়ার উল্লেখযোগ্য মানোন্নয়ন নেই। শিক্ষার নামে চলছে বাণিজ্য। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি, পাঠাভ্যাসে অমনোযোগ, শিক্ষকের পাঠদানে নিরুত্সাহ, শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো সবই শিক্ষা বিস্তারের অন্তরায়। কোচিং সেন্টারগুলো দখল করে নিয়েছে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক ক্ষেত্রে নেমে এসেছে অনিয়ম, অরাজকতা। একসময় শুরু হয়েছিল নকলের মহামারী। বর্তমানে নকল প্রবণতা কমে গেলেও শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জয়জয়কার। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষাও। শুরু হয়েছে মারামারি, হানাহানি, দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, শিক্ষক দলাদলি। শিক্ষা ক্ষেত্রে অবনতিশীল পরিবেশের অন্যতম কারণ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠদানে অবহেলা। শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে শিক্ষাদানের বদলে আজকাল অনেক শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এমনকি শিক্ষকরাও অনেক কোচিং সেন্টারের মালিক বলে জানা যায়। শিক্ষকতাকে তারা নিচ্ছেন এক লাভজনক বাণিজ্য হিসেবে। আর সে কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষার নামে সহজলভ্য পণ্য ক্রয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। অভিভাবকরাও হয়ে পড়েছেন জিম্মি। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বাইরে পার্টটাইম কাজের প্রতি আগ্রহের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অথচ এমন একটা সময় ছিল যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকগণ রীতিমতো ক্লাস নিতেন। শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখেছে তা আদায় করে নিতেন। তারা সবাই ক্লাসের বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতেন। সে আমলে কোনো শিক্ষকের কাছে অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ার কথা চিন্তাও করা যেত না। বরং প্রয়োজনে তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক রুমে এনে বিনা পারিশ্রমিকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। শিক্ষকতা পেশাকে তারা গ্রহণ করেছিলেন এক মহান ব্রত হিসেবে।    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার মতো এক উদ্বেগজনক খবর কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। এর কারণ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের প্রতি অমনোযোগ এবং কোচিং সেন্টারমুখিতাকে দায়ী করা হয়েছে। সেই সময়ের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি নায়েমের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি কলেজ শিক্ষা ও তার ব্যবস্থাপনায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেশের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিংহভাগই বেসরকারি কলেজ, যা গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত। অনেক ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির কার্যকলাপের ওপর সরকারি পর্যায়ে তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বেসরকারি কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সত্যিকার যোগ্যতা ও মেধা সবসময় যাচাই করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের আয়-ব্যয় নিয়ে স্বচ্ছতারও প্রশ্ন তোলা হয় প্রতিবেদনটিতে। এসব কারণে শিক্ষার পরিবেশও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেখা যায়, স্নাতক পরীক্ষায় পাসের শতকরা হার খুব কম সময়ই পঞ্চাশের ওপরে ওঠে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না, এমন নজিরও রয়েছে। আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী শিক্ষক এসেছেন। শিক্ষাঙ্গনের অবকাঠামোগত মানোন্নয়নও ঘটেছে। যুক্ত হয়েছে অনেক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা। তারপরও শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক ন্যায়নিষ্ঠভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন, শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন, এটাই বাস্তবসম্মত এবং একান্ত কাম্য। শিক্ষকের আদর্শেই গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্। শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্যও তাই। লেখক : গল্পকার

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

সবার ওপরে শিক্ষা

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সঙ্কট। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়ার উল্লেখযোগ্য মানোন্নয়ন নেই। শিক্ষার নামে চলছে বাণিজ্য। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি, পাঠাভ্যাসে অমনোযোগ, শিক্ষকের পাঠদানে নিরুত্সাহ, শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো সবই শিক্ষা বিস্তারের অন্তরায়। কোচিং সেন্টারগুলো দখল করে নিয়েছে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক ক্ষেত্রে নেমে এসেছে অনিয়ম, অরাজকতা। একসময় শুরু হয়েছিল নকলের মহামারী। বর্তমানে নকল প্রবণতা কমে গেলেও শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জয়জয়কার। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষাও। শুরু হয়েছে মারামারি, হানাহানি, দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, শিক্ষক দলাদলি। শিক্ষা ক্ষেত্রে অবনতিশীল পরিবেশের অন্যতম কারণ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠদানে অবহেলা। শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে শিক্ষাদানের বদলে আজকাল অনেক শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এমনকি শিক্ষকরাও অনেক কোচিং সেন্টারের মালিক বলে জানা যায়। শিক্ষকতাকে তারা নিচ্ছেন এক লাভজনক বাণিজ্য হিসেবে। আর সে কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষার নামে সহজলভ্য পণ্য ক্রয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। অভিভাবকরাও হয়ে পড়েছেন জিম্মি। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বাইরে পার্টটাইম কাজের প্রতি আগ্রহের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অথচ এমন একটা সময় ছিল যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকগণ রীতিমতো ক্লাস নিতেন। শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখেছে তা আদায় করে নিতেন। তারা সবাই ক্লাসের বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতেন। সে আমলে কোনো শিক্ষকের কাছে অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ার কথা চিন্তাও করা যেত না। বরং প্রয়োজনে তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক রুমে এনে বিনা পারিশ্রমিকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। শিক্ষকতা পেশাকে তারা গ্রহণ করেছিলেন এক মহান ব্রত হিসেবে।    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার মতো এক উদ্বেগজনক খবর কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। এর কারণ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের প্রতি অমনোযোগ এবং কোচিং সেন্টারমুখিতাকে দায়ী করা হয়েছে। সেই সময়ের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি নায়েমের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি কলেজ শিক্ষা ও তার ব্যবস্থাপনায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দেশের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিংহভাগই বেসরকারি কলেজ, যা গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত। অনেক ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির কার্যকলাপের ওপর সরকারি পর্যায়ে তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বেসরকারি কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সত্যিকার যোগ্যতা ও মেধা সবসময় যাচাই করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের আয়-ব্যয় নিয়ে স্বচ্ছতারও প্রশ্ন তোলা হয় প্রতিবেদনটিতে। এসব কারণে শিক্ষার পরিবেশও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেখা যায়, স্নাতক পরীক্ষায় পাসের শতকরা হার খুব কম সময়ই পঞ্চাশের ওপরে ওঠে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীই পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না, এমন নজিরও রয়েছে। আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী শিক্ষক এসেছেন। শিক্ষাঙ্গনের অবকাঠামোগত মানোন্নয়নও ঘটেছে। যুক্ত হয়েছে অনেক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা। তারপরও শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক ন্যায়নিষ্ঠভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন, শিক্ষার্থীদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন, এটাই বাস্তবসম্মত এবং একান্ত কাম্য। শিক্ষকের আদর্শেই গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত্। শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্যও তাই। লেখক : গল্পকার